বর্তমান বিশ্বের প্রধানত চার ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছেঃ ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক, মিশ্র ও ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। নিম্নে ইসলামিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো।
ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি পবিত্র কুরআন ও হাদিস। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উৎপাদন ও বণ্টনের বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে হবে।
ইসলামি অর্থব্যবস্থা মানুষের জীবনের সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করে। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম দ্রব্যসামগ্রী, জীবজন্তু, পরিবেশ এবং বস্তুসমূহও সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এসকল বস্তুসামগ্রী ও পরিবেশ-প্রকৃতি ব্যবহার করে ধর্মানুমোদিতভাবে অধিকতর সম্পদ সৃষ্টি ও ভোগ করবে এটাই ইসলামের বিধান।
সম্পদের মালিকানাঃ ইসলামের সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পদ মানুষ তার ইচ্ছামতো ব্যবহার ও ভোগ করতে পারে। এ সম্পদ সে তার উত্তরাধীকারীদের নিকট হস্তান্তর করতে পারে।
শরিয়তভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যাবলিঃ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সকল কার্যাবলি শরিয়তের বিধান অনুসারে পরিচালিত হয়। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মৌল স্তম্ভ, পবিত্র কুরআনের নির্দেশাবলি এবং রাসুল (সা.) এর হাদিসের বিধান অনুসারে অর্থনৈতিক কার্যাবলির মৌলিক নীতিমালা নির্ধারিত হয়।
উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদনের উপাদানসমূহের পারিতোষিকঃ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় যে কোন ব্যক্তি একক বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে শরিয়তসম্মত দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে। সে নিজেও প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় ও ভোগ করতে পারে। উৎপাদনের লক্ষ্য হলো “হালাল” বা ধর্মসম্মত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন নিশ্চিত করা। সামাজিক কল্যাণমুখী শোষণহীন উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় বৃহদায়তন উৎপাদন কার্যক্রম প্রচলিত আছে। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগ নাই এমন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎপাদন কার্যক্রম গৃহীত হয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থাকে বলে যাকাত। সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। ন্যূনতম যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয় তাকে ইসলামি পরিভাষায় নিসাব বলে।
যে কোন অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের অন্যতম উপাদান পুঁজি বা মূলধন। মূলধনের জন্য সুদ প্রদানের ব্যবস্থা আছে। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সুদ লেনদেন হারাম বা নিষিদ্ধ। এ অর্থ ব্যবস্থায় সুদের বদলে পুঁজিপতি তার পুঁজি বিনিয়োগের আনুপাতিক হারে লাভ বা লোকসানে অংশগ্রহণ করে। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদমুক্ত আমানত রাখা ও ঋণ গ্রহণ করার ব্যবস্থা আছে। উৎপাদক ও ব্যবসায়ী এঈ ঋণ গ্রহণ করতে পারেন এবং ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত লাভ থেকে ঋণদানকারী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে (অর্থাৎ ব্যাংক) লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারেন। এ অর্থ ব্যবস্থায় শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা যথাসময়ে পরিশোধ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে উৎপাদিত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন সম্ভব হয়।
আয় বণ্টনঃ ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় শোষণহীন উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসৃত। এখানে উৎপাদনের উপাদানসমূহের পারিতোষিক প্রদানে ন্যায় এবং সাম্যের নীতি অনুসরণ করা হয়। উৎপাদনে অবদানের ভিত্তিতে উপাদানসমূহের পাওনা পরিশোধ করা হয়।
আরও পড়ুন- ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
আরও পড়ুন- সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
আরও পড়ুন- মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য