এই লেখা থেকে আমরা জানতে পারবো পৃথিবীর গতি কত প্রকার? আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি কাকে বলে? আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির প্রমাণ এবং আহ্নিক গতির ফলাফল, বার্ষিক গতির ফলাফল।
পৃথিবীর গতি
একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হতো যে পৃথিবী স্থির এবং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবী শুধু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে না, নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার উপরেও আবর্তন করে। পৃথিবীর গতি দুই প্রকার। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি। নিজ অক্ষের উপর একদিনে আবর্তন করাকে আহ্নিক গতি এবং কক্ষপথে এক বছরে সূর্যকে পরিক্রমণ করাকে বার্ষিক গতি বলে।
নিম্নে আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আহ্নিক গতি
পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী তার নিজের মেরুদন্ডের বা অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিকে দৈনিক গতি বা আহ্নিক গতি বলে। পৃথিবী তার নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। একে সৌরদিন বলে।
পৃথিবীর আহ্নিক গতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। পৃথিবীপৃষ্ঠ পুরোপুরি গোল না হওয়ায় এর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমান নয়। সে কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সকল স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। এজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি। নিরক্ষ রেখায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার। ঢাকায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ১৬০০ কিলোমিটার। যত মেরুর দিকে যাওয়া যায়, এ আবর্তন বেগ তত কমতে থাকে এবং মেরুদ্বয়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়।
পৃথিবীর আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না বা কেন আমরা আহ্নিক গতি অনুভব করি না। এর কারণ হলোঃ
১। ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করার কারণে মানুষ, জীবজন্তু, বায়ুমণ্ডল, প্রভৃতি পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করছে। তাই আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না।
২। ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সকল বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ বল দ্বারা দিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করছে। তাই আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।
৩। পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা এত বেশি ক্ষুদ্র যে এই গতি আমরা অনুভব করি না বা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।
৪। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের আবর্তন গতি সুনির্দিষ্ট তাই আমরা এই গতি অনুভব করি না।
৫। দুটি বস্তুর মধ্যে একটি যদি দাঁড়িয়ে থাকে এবং অন্যটি যদি চলতে থাকে তাহলে বোঝা যায় তার গতি আছে। এভাবে পৃথিবীর সামনে স্থির বা সমান কোন বস্তু নেই যার সাপেক্ষে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি।
এখন আমরা পৃথিবীর আহ্নিক গতির প্রমাণ ও আহ্নিক গতির ফলাফল বিষয়ে আলোচনা করবো।
আহ্নিক গতির ফলাফল
পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে যেসব পরিবর্তন দেখতে পাই তা হলো-
১। পৃথিবীর দিবারাত্রি সংগঠনঃ পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল। আমরা জানি পৃথিবী গোল এবং পৃথিবীর নিজের কোন আলো নেই। সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়। আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীর যেদিক সূর্যের সামনে আসে, সেদিক সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। তখন ঐ আলোকিত স্থানসমূহে দিন। আলোকিত স্থানের উল্টা দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর যেদিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেদিকটা অন্ধকার থাকে। এসব অন্ধকার স্থানে তখন রাত্রি।
পৃথিবীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে আলোকিত দিকটি অন্ধকারে আর অন্ধকারের দিকটি সূর্যের দিকে বা আলোতে চলে আসে। ফলে দিনরাত্রি পাল্টে যায়। অন্ধকার স্থানগুলো আলোকিত হওয়ার ফলে এসব স্থানে দিন হয়। আর আলোকিত স্থান অন্ধকার হয়ে যাওয়ার ফলে ঐসব স্থানে রাত হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হতে থাকে।

২। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিঃ আহ্নিক গতির ফলেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখি প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হচ্ছে না। আজকে জোয়ার যে স্থানে যে সময়ে হচ্ছে পরের দিন সেই সময়ে না হয়ে তার ৫২ মিনিট পরে হচ্ছে। এই যে সময়ের ব্যবধান সেটা আহ্নিক গতির কারণেই হচ্ছে।
৩। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টিঃ পৃথিবীর অভিগত গোলকের কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি ও পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এসব কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
৪। তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টিঃ দিনের বেলায় সূর্যের কিরণ থাকার কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। রাত হলে তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা কমে যায়। যদি আহ্নিক গতি না থাকতো তাহলে এভাবে দিনের পর রাত আসতো না এবং তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি হতো না। এই তাপমাত্রার তারতম্য হলো আহ্নিক গতির একটি ফল।
৫। সময় গণনা বা সময় নির্ধারণঃ আহ্নিক গতির ফলে সময়ের হিসাব করতে সুবিধা হয়। একবার সম্পূর্ণ আবর্তনের সময়ের ২৪ ভাগের ১ ভাগকে ঘণ্টা এবং ঘণ্টার ৬০ ভাগের এক ভাগকে মিনিট ধরা হয়। মিনিটের ৬০ ভাগের ১ ভাগকে সেকেন্ড। এভাবে সময়ের গণনা করা হয়।
৬। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টিঃ পৃথিবীর আবর্তনের কারণেই পৃথিবীর সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে সূর্যালোক পড়ে এবং দিনরাত্রি হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য সূর্যালোকই বেশি প্রয়োজন। দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে শক্তি সঞ্চার করে এবং রাতে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়। কোন প্রাণী দিনে আবার কোন প্রাণী রাতে খাদ্য সংগ্রহ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে দিনরাত্রি সংঘটিত হয়। আর এর উপরেই উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের নিয়মশৃঙ্খলা অনেকখানি নির্ভর করে।
আহ্নিক গতির প্রমাণ
পৃথিবী যে নিজের মেরুদণ্ডের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে তার প্রমাণ হলোঃ
১। মহাকাশযানের পাঠানো ছবিঃ পৃথিবী থেকে যেসব উপগ্রহ ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সেগুলোর প্রেরিত ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এ ছবিগুলোই পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির সর্বাধুনিক ও নির্ভুল প্রমাণ।
২। পৃথিবীর আকৃতিঃ কোন নমনীয় বস্তু যদি নিজ অক্ষের উপর লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে তবে তার মধ্যে একই সঙ্গে কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বলের উদ্ভব হয়, যার প্রভাবে গোলাকৃতি বস্তুর প্রান্তদেশ কিছুটা চাপা ও মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত হয়। আবর্তন গতির প্রভাবেই জন্মকালে নমনীয় পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একটু চাপা এবং মধ্যভাগ সামান্য স্ফীত হয়ে যায়। বিজ্ঞানী নিউটনের মতে, পৃথিবীর আবর্তনের ফলেই এর আকৃতি এমন হয়েছে।
৩। রাত-দিন হওয়াঃ পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত হয়। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত পৃথিবীর আহ্নিক গতির অন্যতম প্রমাণ। এ আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর একদিক চিরকাল অন্ধকারে থাকতো এবং অপরদিক আলোকিত হয়ে থাকতো।
৪। ফেরেলের সূত্রের সাহায্যেঃ আমরা জানি সমুদ্রস্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এই বেঁকে যাওয়াটা ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত। বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের এই গতিবেগ প্রমাণ করে যে, আহ্নিক গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে।
বার্ষিক গতি
সূর্যের মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট দিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে।
একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছর বলে। কিন্ত আমরা ৩৬৫ দিনকে এক বছর ধরি। এতে প্রতি বছর প্রায় ৬ ঘণ্টা অতিরিক্ত থেকে যায়। এ অতিরিক্ত সময়ের সামঞ্জস্য আনার জন্য প্রতি ৪ বছর পরপর ফেব্রুয়ারী মাসকে ১ দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং ঐ বছরটিকে ৩৬৬ দিন ধরা হয়। সেই বছরকে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলে। সাধারণত কোন বছরকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগশেষ না থাকে তবে ঐসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার ধরা হয়।
এখন আমরা পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল ও বার্ষিক গতির প্রমাণ বিষয়ে আলোচনা করবো।
বার্ষিক গতির ফলাফল
বার্ষিক গতির ফল হলো- (১) দিনরাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি, (২) ঋতু পরিবর্তন
দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধিঃ
পৃথিবীর দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ-
ক) পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি, খ) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, গ) পৃথিবীর অবিরাম আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি, ঘ) পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান, ঙ) পৃথিবীর কক্ষপঠে কৌণিক অবস্থান
সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখায় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে থাকে। পৃথিবী ৬৬.৫ ডিগ্রী কোণ করে চলার কারণে ২১ মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের কিরণ উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১ জুন পৃথিবী এমন এক জায়গায় আসে যে তখন সূর্যের রশ্মি ভূপৃষ্ঠের ২৩.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পড়ে। এ সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুকে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে। সে কারণে এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য ও তাপমাত্রাও বেশি হয়ে থাকে। উত্তর গোলার্ধে ২১ জুন দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত হয়। ২১ জুন সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমায় পৌঁছায়, একে কর্কটসংক্রান্তি বলে।
২৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় ২১ মার্চের মতো সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেদিন সর্বত্র দিবারাত্রি সমান থাকে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে কিরণ বেশি দিতে থাকে। ২২ ডিসেম্বর এমনভাবে কোণ করে থাকে তাতে দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন হয়। ২২ ডিসেম্বর সূর্য দক্ষিণায়নের শেষ সীমায় পৌঁছায়। একে মকরসংক্রান্তি বলে। এ সময় সূর্যের রশ্মি ২৩.৫ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষাংশ অর্থাৎ মকরক্রান্তির উপর লম্বভাবে পতিত হয়।
২১ মার্চ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখার উপর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। এই দুদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়। সেদিনকে বিষুব বলে। ২১ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল তাই একে বাসন্ত বিষুব বলে। ২১ সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল। তাই এ দিনকে শারদ বিষুব বলে।

বার্ষিক গতির প্রমাণ
১। রাতের আকাশে নক্ষত্রদের স্থান পরিবর্তন, অন্তর্ধান ও পুনরাগমনঃ বিভিন্ন সময়ে রাতের আকাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নক্ষত্রগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। মেঘমুক্ত আকাশে কয়েকদিন পরপর লক্ষ করলে নক্ষত্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে সরে যাওয়া বোঝা যায়। এরপর একদিন এরা অদৃশ্য হয়ে যায়। ঠিক এক বছর পর এরা আদি স্থানে ফিরে আসে। এ থেকে পৃথিবীর যে বার্ষিক গতি আছে তা বোঝা যায়।
২। আকাশে সূর্যের পরিবর্তিত অবস্থানঃ বছরে বিভিন্ন সময়ে সূর্যকে বিভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব আকাশে একই জায়গা থেকে ওঠে না এবং পশ্চিম আকাশে একই জায়গায় অস্ত যায় না। বছরে ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়। বাকি ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে উত্তর দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়। পৃথিবী একই জায়গায় স্থির থেকে ঘুরলে প্রতিদিনই সূর্য একই জায়গায় উদিত হতো। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে এ ঘটনা ঘটে।
৩। বিভিন্ন গ্রহের পরিক্রমণ গতিঃ দূরবীনের সাহায্যে পৃথিবী থেকে দেখা গেছে সকল গ্রহ সূর্যকে পরিক্রমণ করছে। পৃথিবীও একটি গ্রহ। সুতরাং এরও পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি রয়েছে।
৪। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাঃ আধুনিক যুগের মহাশূণ্যচারীগণ মহাশূন্যযান থেকে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি দেখেছেন।
৫। মহাকর্ষ সূত্রঃ সূর্যের তুলনায় পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তাই স্বাভাবিক কারণে সূর্যের মহাকর্ষ বলে প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।
আরও পড়ুন- ঋতু পরিবর্তন কাকে বলে? ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর
আরও পড়ুন- জোয়ার ভাটা কি? জোয়ার-ভাটা কেন হয়?