in

রচনাঃ আমার জীবনের লক্ষ্য

রচনাঃ আমার জীবনের লক্ষ্য
রচনাঃ আমার জীবনের লক্ষ্য

রচনাঃ আমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: জীবনে সার্থকতা লাভ করতে হলে একটি দৃঢ় সংকল্প চাই। কবি বলেছেন ‘মন রে কৃষি কাজ জান না, এমন মানব জনম রইল পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা’। মানব জমিনে সোনা ফলাতে হবে। এজন্য ঠিক সময়ে বীজ বপন এবং তার পরিচর্যা দরকার। মানব জীবনের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন পরিশ্রম, সাধনা ও একাগ্রতা। জীবনের লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার পথে অনেক বাধা, বিপত্তি আসবে। কিন্তু তাতে থেমে না গিয়ে স্থির লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একটি গন্তব্যবিহীন জাহাজ কোন কাজের নয়। তেমনি লক্ষ্য বিহীন মানবজীবনও কোন কাজে আসে না। জীবনে চলার পথে চাই নির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পথ রেখা।

আমার জীবনের লক্ষ্য: প্রত্যেক সচেতন মানুষের মতো আমার জীবনেও একটা লক্ষ্য আছে। আমি শৈশব পার করে কৈশোরে পদাপর্ণ করেছি। অনেক ভেবে চিন্তে আমি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি। মানব জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্যের কল্যান সাধন। এই কাজ অনেক ভাবেই করা সম্ভব। তবে যেসব মানুষ পেশাগতভাবে ডাক্তার হন, তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মধ্য দিয়েই এই গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন। ডাক্তারি যেমন একই সঙ্গে একটি পেশা, আবার অন্যদিকে এটি সমাজের প্রতি পালনীয় একটি কল্যানকর কর্তব্যও বটে। আমি তাই ব্যক্তিগতভাবে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করাকেই আমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিতে চাই।

জীবনের লক্ষ্য নির্বাচনের গুরুত্ব: সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপনের জন্যে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অভিমুখ থাকা একান্তই জরুরি। অনেক সময় আমরা অনেকভাবেই জীবনকে অপচয় করে ফেলি, এই ক্ষতি পরবর্তীতে আর কখনোই পূরণ করা সম্ভব হয় না। মানুষের নিজস্ব একটি লক্ষ্য স্থান থাকলে সেই স্বপ্নইে সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। বৈঠাবিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুজেঁ পায় না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুজেঁ পায় না।

মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে ডা.লুৎফর রহমান এর বক্তব্য স্মরনীয়, ‘জীবনের প্রথম থেকেই ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। যদি এটা একবার, ওটা একবার করে বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কখনো কোনো উন্নতি হবে না। এই রকম করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় আকাঙ্খা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা যায় না।

জীবনে পেশার প্রয়োজনীয়তা: পেশা হল কোন ব্যক্তির কোন নির্দিষ্ট বা বিশেষ বিষয়ে শিক্ষা লাভ বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ। পরবর্তীতে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী বা অন্য কোন বৃত্তিবিশেষ এর মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেন বা জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রত্যেকটি মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্যে অর্থের প্রয়োজন। নিজের জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্যও অর্থের প্রয়োজন, জীবিকা নির্বাহের জন্য তাই পেশা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের পেশাই নির্ধারণ করে দেয় তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ সমৃদ্ধি এবং তার জীবন চর্চার মান। পেশা নির্বাচনের সঙ্গে প্রায়শই জড়িয়ে থাকে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি।

লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়: ছাত্রজীবন হলো এক ধরনের তপস্যার সময়। এই সময় কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের সময়। তাই ছাত্র জীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক পথে পরিশ্রম ও মনপ্রাণ দিয়ে সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। তাই ছাত্রাবস্থাতেই একটি লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

সমাজে ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তা: আমাদের দেশের প্রায় সিংহভাগ মানুষই গ্রামাঞ্চলে অথবা মফস্বল এলাকায় বসবাস করেন। এই সব প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রোগব্যাধি চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা খুবই অপ্রতুল, বেশিরভাগ মানুষই বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বছরের বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা নানান রকম রোগব্যাধিতে ভোগেন এইসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনি অপ্রতুল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এই সব এলাকার মানুষের মনে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণাও নেই। তারা বেশিরভাগ সময়েই নানান ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করে ফেলেন। এই সমস্ত মানুষের মনে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাও আমাদের আশু কর্তব্য। শুধু গ্রাম বা মফস্বলের মানুষের জন্যই নয়, শহরাঞ্চলের মানুষেরও জীবনযাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি রোগ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যারাঁ মানুষের সেবা করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ, তাঁদেরও যেমন তাঁদের কর্তব্যের কথা সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত ঠিক তেমনি যাঁরা এই ডাক্তারদের সেবা শুশ্রূষাতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদেরও এই পেশার মানুষদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা বজায় রাখা প্রয়োজন।

লক্ষ্য পূরণের ভিত্তিস্থাপনা: ছোটবেলা থেকেই আমি ডাক্তার হয়ে ওঠার এক প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বড় হয়েছি। আমি বরাবর চাইতাম পীড়িত মানুষদের সেবা করতে। শৈশবকাল থেকেই মানুষের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা আমায় পীড়া দিত। আমি তাদের দুঃখ মোচনের চেষ্টা করতাম। তাই সেই সময় থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার। ডাক্তারি নিয়ে পড়ার ইচ্ছাকে বাস্তাবয়িত করার উদ্দেশ্যেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু। জীব বিজ্ঞানের উপর বরাবরই আমি এক বিশেষ টান অনুভব করেছি। তাছাড়া ডাক্তারি পড়ার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য জীববিজ্ঞানকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়া প্রয়োজন। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেতে হলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। তাই জীববিজ্ঞানের পাশাপাশি অন্য বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

ডাক্তারি পেশায় দুর্নীতি: ডাক্তারি পেশা যেমন পবিত্র, তেমনি প্রদীপের তলার কালির মত এই পেশায়ও অনেক কালো দিক আছে। অন্তত আমাদের দেশে। আমাদের দেশের ডাক্তারদের কাছে বর্তমানে মানুষের সেবা করার চাইতে নিজের আখের গোছা গোছানোটা বেশি দরকারি। অতিরিক্ত ভিজিট রাখার কারণে অধিকাংশ মানুষ তাঁদের কাছ থেকে ডাক্তারি পরিষেবা পান না। সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে অনেক ডাক্তার রাজি থাকেন না, তাঁরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যার ফলস্বরূপ বেশিরভাগ গরিব মানুষ ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া জাল ঔষধের মতো খারাপ ব্যবসা চক্রে বহু ডাক্তারের নাম খবরে উঠে আসে। এমনকি মানবদেহের অঙ্গ পাচারের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন অনেক ডাক্তার, যা ভীষণ লজ্জাজনক। এইসব অন্ধকার দিক থাকা সত্ত্বেও এটা সত্যি যে ডাক্তার ছাড়া এই সমাজ অসহায় হয়ে পড়বে। তাই আমি চাই একজন আদর্শ ডাক্তার হতে, যা বহু মানুষের মনে আবার আশার সঞ্চার ঘটবে, আমি চাই ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে, যা এই সমাজের জন্য খুবই প্রয়োজন।

জনসেবা ও কর্মজীবন: আমি ডাক্তার হলে নিজের সুবিধার্থে শহরে আমার কর্মস্থল করতে চাইব না, বরং বেছে নিব সুবিধাবঞ্চিত গ্রামগুলো। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি না জানার কারণে গ্রামের পর গ্রাম বিভিন্ন সংক্রামক মহামারির শিকার হয়ে শ্মশানে পরিণত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। আমার ডাক্তার হওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হলে আমি এই মরণ যজ্ঞ থেকে উদ্ধার পেতে সেই মুমূর্ষ মানুষদের সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার প্রসারে আত্মনিয়োগ করব।

উপসংহার: আমার আজ এই পারস্পারিক হিংসা হানাহানির যুগে, এই কঠিন সময়ে ভালো কিছু করার কথা,অন্যের বিষয়ে ভাববার কথা ভুলতে বসেছি। কেউ আজ আত্মস্বার্থের কথা ভুলে জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের কথা ভাবলে সে সমাজে উপহাসের পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তবু আশা রাখি যে আজ যা আমার জীবনে তাকে বাস্তবায়নের পথে আমি সফল হব।

আরও পড়ুন-  বাংলা অন্যান্য রচনা