in

ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/ সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ‘

ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..
ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..

ভাবসম্প্রসারনঃ ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..’

মূলভাবঃ মানব জনমের উদ্দেশ্য হলো মানবজাতির সেবা করা, সহানুভূতি দেখানো এবং অন্যের উপকার করার ইচ্ছা থাকা।

— আলবার্ট স্কিউজার

অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব জনমের স্বার্থকতা। মানুষ হিসেবে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব সমাজের অন্যদের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা। শুধু ভোগ করার মাঝে কোন সার্থকতা নেই। তাই কবি বলেছেন, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/ সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ‘

সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা বিবেক বুদ্ধির সমন্বয়ে জগতে কল্যাণের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আমরা সকলে কোন না কোন সমাজে বাস করি। তাই সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। যদি আমরা সর্বক্ষণ নিজেদের চিন্তায় মগ্ন থাকি তবে বুঝে নিতে হবে স্বার্থপরতা আমাদের রাহুকে গ্রাস করেছে। স্বার্থপরতা মনুষ্যত্ব থেকে আমদের যোজন মাইল দূরে সরিয়ে রাখে। মানুষ হিসেবে আমরা তখনই সফল যখন অপরের বিপদে এগিয়ে আসার মন-মানসিকতা আমাদের মধ্যে থাকবে, অপরের দুঃখে আমাদের প্রাণ কেঁদে উঠবে।

ভালো থাকতে হলে সমাজের সকলকে নিয়েই ভালো থাকতে হয়। যদি আপনার পড়শীর বিপদে আপনি চোখ বন্ধ করে রাখেন তবে বুঝে নিবেন বিপদ খুব শীঘ্রই আপনার দরজায় কড়া নাড়বে আর আপনি তখন কাউকে পাশে পাবেন না। কারণ সৃষ্টিকর্তার কাছে স্বার্থপর ব্যক্তির সকল হিসাব-নিকাশ লিপিবদ্ধ আছে৷ মানুষের জীবনে ভাঙ্গা-গড়া থাকবেই৷ এটি জীবনের নিয়ম। তবে যে ব্যক্তি বিপদের সময় দেখেও না দেখার ভান করে দূরে সরে থাকে তার উপর থেকে শ্রদ্ধা চিরদিনের মতো উঠে যায়। শুধু অবশিষ্ট থাকে একরাশ তিক্ততা। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জীবনের আসল মানেটা তখনই ফুটে উঠে যখন আপনি অন্যের উপকার করার মাঝে নিজের সুখ খুজে পান।”

বর্তমানে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বসবাস করছি। আজকের এই আধুনিক সভ্যতা একদিনে গড়ে উঠেনি। বহু মানুষ পরস্পরের কাধে কাধ রেখে পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে তিল তিল করে এই সভ্যতা গড়ে তুলেছে৷ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় যে জাতির মধ্যে যত আত্মত্যাগের মন-মানসিকতা আছে সে জাতি ততই উন্নত। কারণ অন্যের তরে আত্মত্যাগের মানসিকতা মানব চরিত্রকে আরো উন্নত করে গড়ে তোলে। সুপ্ত অবস্থায় থাকে গুণসমূহ উন্মোচিত করে৷ ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে একদল শিক্ষার্থী রাজপথে নেমে এসেছিল। সেদিন তারা জীবনের পরোয়া করেনি। তাদের মননে ছিল শুধু একটি শপথ “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।” দেশের জন্য আত্মত্যাগের দীক্ষায় দীক্ষিত ছিল বলে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে তারা আমাদের উপহার দিয়েছে বাংলা ভাষা৷ আর ৭১ এর বীর শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে আছে। সেদিন তারা পরিবার পরিজন, নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে অস্ত্র হাতে নেমেছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য। আর রাজাকারেরা হাত মিলিয়েছিল শত্রুদের সাথে। এই থেকে বোঝা যায় স্বার্থপর ব্যক্তি কখনোই সত্যের বাহক হতে পারেনা। তারা নিজের প্রয়োজনে যে কোন সময় গিরগিটির মতো রূপ বদলাতে পারে৷ এরা সমাজের জন্য বিষাক্ত। আর যে ব্যক্তি অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার মানসিকতা ধারণ করে সে সমাজের ও দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এমন বড় মনের মানুষদের জন্য আজ আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বাসিন্দা।

বর্তমানের যান্ত্রিক দুনিয়াতে আমরা ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি৷ সবাই এখন শুধু নিজের কথাই চিন্তা করে। কীভাবে আরও বেশি ভোগ করা যাবে, কীভাবে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করা যাবে এই চিন্তা সবাইকে গ্রাস করে রেখেছে। আমরা এটাই ভুলে গেছি যে মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ। শুধুমাত্র ভোগ করা একজন মানুষ আর একটি পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমাদের সকলেরই উচিত যতটা সম্ভব অন্যের বিপদে পাশে এসে দাঁড়ানো। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষ একসূত্রে আবদ্ধ৷ সম্প্রীতির বন্ধন যতই মজবুত হবে ততই একটি জাতি এগিয়ে যাবে। স্বার্থপরতা মানুষে মানুষে বিদ্বেষের জন্ম দেয়। আর সকল সংঘাতের মূলে থাকে হিংসা, দ্বেষ। আর আত্মত্যাগের মানসিকতা মানুষে মানুষে বন্ধনকে আরো মজবুত করে তোলে। কারণ, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/ সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’

মন্তব্যঃ উদারতা মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ৷ মহৎ ব্যক্তি কখনো নিজের কথা ভেবে অন্যের বিপদে চোখ বন্ধ করে থাকেনা। জেট লি বলেছেন,

“আমি বিশ্বাস করি পৃথিবী একটি বিশাল পরিবার এবং আমরা তার সদস্য। তাই আমাদের একে অপরের উপকার করতে হবে।”

গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-

১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

২। ভাবসম্প্রসারণঃ একতাই বল

৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়

৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ

৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ

৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য

৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন

৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

১০। ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল