in ,

আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরি কত প্রকার?

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণ।

আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরি কত প্রকার?
আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরি কত প্রকার?

এই লেখায় আমরা জানতে পারবো আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণ। আগ্নেয়গিরি কত প্রকার? আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলাফল।

আগ্নেয়গিরি (volcano):

ভূত্বকের শিলাস্তর সর্বত্র একই ধরনের কঠিন বা গভীর নয়। কোথাও নরম আবার কোথাও কঠিন। কোন কোন সময় ভূগর্ভের চাপ প্রবল হলে শিলাস্তরের কোন দুর্বল অংশের ফেটে যায় বা সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের দূর্বল অংশের ফাটল সুরঙ্গ দিয়ে ভূগর্ভের উষ্ণ বায়ু, গলিত শিলা, ধাতু, ভস্ম, জলীয়বাষ্প, উত্তপ্ত পাথরখণ্ড, কাদা, ছাই প্রবৃত্তি প্রবলবেগে ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়। ভূপৃষ্ঠে ঐ ছিদ্রপথ বা ফাটলের চারপাশে ক্রমশ জমাট বেঁধে যে উঁচু মোচাকৃতির পর্বত সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয়গিরি বলে। আগ্নেয়গিরির মুখে জ্বালামুখ এবং জ্বালামুখ দিয়ে নির্গত গলিত পদার্থকে লাভা বলে।

আগ্নেয়গিরির প্রকারভেদ ( Types of volcano):

অগ্ন্যুৎপাতের ভিত্তিতে আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Active volcano): যেসব আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এখনো বন্ধ হয়নি তাকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন হাওয়াই দ্বীপের মাওনালেয়া ও মাওনাকেয়া।

২। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি (Dormant volcano): যেসব আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত অনেককাল আগে বন্ধ হয়ে গেছে তাদেরকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে যেমন জাপানের ফুজিয়ামা।

৩। মৃত আগ্নেয়গিরি (Extinct volcano): যেসব আগ্নেয়গিরি দীর্ঘকাল ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই সেগুলোকেই মৃত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন ইরানের কোহিসুলতান।

আকার ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে আগ্নেয়গিরিকে নিন্মলিখিতভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।

১। শিল্ড আগ্নেয়গিরি ( Shield volcano): গম্বুজ আকৃতির শিল্ড আগ্নেয়গিরিগুলোর তলদেশ চওড়া এবং ঢাল সামান্য, সাধারণত আকারে বৃহৎ। এ জাতীয় আগ্নেয়গিরি কেন্দ্রীয় নির্গমন পথে বা সারি সারি নির্গমন পথ দিয়ে দ্রুত বেগে প্রবাহিত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো লাভা দ্বারা গঠিত। হাওয়াই দ্বীপের মাওনালেয়া এর উদাহরণ।

২। স্ট্র্যাটো আগ্নেয়গিরি ( Strato volcano): জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ভস্ম ও লাভার সমন্বয়ে স্তরসমূহ দ্বারা এ জাতীয় আগ্নেয়গিরি গঠিত হয়। অধিকাংশ স্ট্র্যাটো আগ্নেয়গিরি অনিয়মিতভাবে গঠিত পর্বতসমূহ যা পর্বত পার্শ্বে উৎপন্ন কেন্দ্রীয় এবং অন্যান্য নির্গমন পথ দিয়ে প্রবাহিত বিক্ষিপ্ত পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত।

৩। সিন্ডার কোণ আগ্নেয়গিরি (Cinder cone volcano): আকারে ছোট আগ্নেয়গিরি গুলোকে সিন্ডার কোণ আগ্নেয়গিরি বলা হয়। এগুলো গ্যাসপূণ পুনঃপুনঃ ক্ষুদ্র বিস্ফোরণের ফল, যেগুলো লাভা ও ভস্মেও সামান্য পরিমাণ নিক্ষেপ করে নির্গমন পথের আশপাশের ছোট এলাকায়। সিন্ডার কোণ আগ্নেয়গিরি এর গড় আকৃতি প্রায় ৮০০ মিটার চওড়া তল এবং ১০০ মিটার উঁচু। মেক্সিকোর পেরিকোটিন এর উদাহরণ।

নিম্নের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলাফল নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ (Reasons of Volcanism):

১। ভূত্বকে দূর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে ভূঅভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা, ভস্ম, ধাতু প্রবলবেগে বের হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।

২। যখন ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে যায় তখন ভূগর্ভের শিলাসমূহ স্থিতিস্থাপক অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয়। এতে শিলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। ফলে তরল পদার্থ দূর্বল স্থান ভেদ করে প্রবলবেগে উৎক্ষিপ্ত হয়ে অগ্নুৎপাতের সৃষ্টি করে।

৩। কখনো কখনো ভূত্বকের ফাটল দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল এবং সমুদ্রের পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করলে প্রচন্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়। ফলে আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে ভূত্বক ফাটিয়ে দেয়। তখন ঐ ফাটলের ভিতর দিয়ে পানি, বাস্প, তপ্ত শিলা প্রভৃতি নির্গত হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।

৪। ভূগর্ভে নানা রাসায়নিক ক্রিয়া ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে প্রচুর তাপ বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাতে ভূঅভ্যন্তরের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।

৫। ভূআন্দোলনের সময় পার্শ্বচাপে ভূত্বকের দূর্বল অংশ ভেদ করে এ উত্তপ্ত তরল লাভা উপরে উত্থিত হয়। এভাবে ভূআন্দোলনের ফলেও অগ্ন্যুৎপাত হয়।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলাফল (Effects of Volcanism):

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন স্থানে এর দ্বারা সামান্য সুফলও পাওয়া যায়। নিম্নে আগ্নেয়গিরির ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধলা হলোঃ

১। অনেক সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত পদার্থ চারদিকে সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে। ভারতের দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকাময় মালভূমি এরুপ নির্গত লাভা দিয়ে গঠিত।

২। সমুদ্র তলদেশেও অনেক আগ্নেয়গিরি আছে। এ থেকে নির্গত লাভা সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এভাবে সৃষ্ট একটি আগ্নেয় দ্বীপ।

৩। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোন অংশ ধসে গভীর গহ্বরের সৃষ্টি হয়। ১৮৮৩ সাকে সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এক বিরাট গহ্বর দেখা যায়।

৪। মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পানি জমে আগ্নেয় হ্রদের সৃষ্টি করে। আলাস্কার মাউন্ট আডাকামা, নিকারাগুয়ার কোসেগায়না এ ধরণের হ্রদ।

৫। আগ্নেয়গিরির নির্গত লাভা, শিলা দ্রব্য প্রভৃতি দীর্ঘকাল ধরে একটা স্থানে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি করে। এ ধরণের পর্বতকে আগ্নেয় পর্বত বলে। যেমন – ইতালির ভিসুভিয়াস।

৬। অনেক সময় আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চিত হতে হতে বিস্তৃত এলাকা নিম্ন সমভূমিতে পরিণত হয়। যেমন উত্তর আমেরিকার স্নেক নদীর লাভা সমভূমি।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম, নগর, কৃষিক্ষেত্র সব ধ্বংস করে। ১৮৭৯ সালে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে হারকিউলেনিয়াম ও পম্পেই নামের দুটি নগর উত্তপ্ত লাভা ও ভস্মরাশির মধ্যে ডুবে গিয়েছিল।

আগ্নেয়গিরির কারণে কেবল মানুষের অপকার নয় উপকারও হয়ে থাকে। এতে ভূমির উর্বরটা বৃদ্ধি পায়। যেমন- দাক্ষিণাত্যের লাভা গঠিত কৃষ্ণমৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।

অনেক সময় লাভার সঙ্গে অনেক খনিজ পদার্থ নির্গত হয়। আমেরিকা যুক্তরাস্ট্রের পশ্চিমাংশে অগ্ন্যুৎপাতের জন্য অধিক পরিমাণে খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায়। অগভীর সমুদ্রে বা হ্রদে লাভা ও ভস্ম সঞ্চিত হয়ে এরুপ ভূভাগ সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন- সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোতের কারণ ও ফলাফল। সমুদ্রস্রোতের প্রভাব