আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি “মিনি বিশ্বকাপ” নামেও পরিচিত। ১৯৯৮ সালে এই টুর্নামেন্টটি যখন শুরু হয় তখন এর নাম ছিল আইসিসি নক আউট টুর্নামেন্ট। ২০০২ সালে নাম পরিবর্তন করে এই টুর্নামেন্টটির নাম রাখা হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
এখন পর্যন্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ৮টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে প্রতি দুই বছর পরপর এই টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা হতো। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশাপাশি আইসিসির অন্য সহযোগী দেশগুলোও এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেত। বাংলাদেশ, কেনিয়া, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে।
২০০৭ সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বলদে যেতে থাকে ক্রিকেট বিশ্বের চেহারা। টি-২০ বিশ্বকাপের সফলতার পর ২০০৯ সালে আইসিসি প্রতি দুই বছরের বদলে ৪ বছর পরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সাথে সহযোগী দেশগুলোকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিং এর শীর্ষ ৮ দেশ নিয়ে টুর্নামেন্টটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অনুষ্ঠিত হওয়ার ৬ মাস আগ পর্যন্ত যেই ৮টি দেশ র্যাঙ্কিং এ শীর্ষ আটে অবস্থান করে তারাই কেবল টুর্নামেন্টটি অংশ নিতে পারে।
টি-২০ বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাশাপাশি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করেছে আইসিসি। এত টুর্নামেন্টের ভিড়ে ক্রিকেট সূচীকে কিছুটা হালকা করতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইসিসি। এই যেমন ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। ২০২১ ও ২০২২ সালে টানা দুটি টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে আইসিসি। তাই একরকম বাধ্য হয়েই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাদ হয়েছে আইসিসিকে। তবে আইসিসি জানিয়েছে ২০২৫, ২০২৯ সালে ঠিকই নতুন করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করা হবে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চ্যাম্পিয়ন লিস্টে কোন একক দলের আধিপত্য নেই। ৮ টুর্নামেন্টে ভিন্ন ভিন্ন ৭দল শিরোপা জিতেছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সবচেয়ে বেশি ২বার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে দুইবার। কিন্তু বৃষ্টি বিঘ্নিত ২০০২ সালের ফাইনালে ভারতের সাথে যৌথভাবে শ্রীলঙ্কাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। এছাড়া পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা একবার করে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতার স্বাদ পেয়েছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কে কতবার জিতেছে তা নিচের তালিকা থেকে জেনে নিন।
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চ্যাম্পিয়ন লিস্ট
সাল | চ্যাম্পিয়ন | রানার-আপ |
---|---|---|
২০১৭ | পাকিস্তান | ভারত |
২০১৩ | ভারত | ইংল্যান্ড |
২০০৯ | অস্ট্রেলিয়া | নিউজিল্যান্ড |
২০০৬ | অস্ট্রেলিয়া | ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
২০০৪ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ইংল্যান্ড |
২০০২ | শ্রীলঙ্কা-ভারত | – |
২০০০ | নিউজিল্যান্ড | ভারত |
১৯৯৮ | দক্ষিণ আফ্রিকা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭ জিতেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এটি প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শিরোপা ছিল। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো কোন আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭ এর ফাইনালে পাকিস্তান প্রথমে ব্যাটিং করে ৩৩৮/৪ রান সংগ্রহ করে। ফখর জামান ১০৬ বলে ১১৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। ব্যাটিং করতে নেমে মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে ভারত মাত্র ১৫৮ রানে অল আউট হয়ে যায়। পাকিস্তান জেতে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন পাকিস্তানের হাসান আলী। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ভারতের শিখর ধাওয়ান (৩৩৮ রান), সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান আলী (১৩ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৩
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৩ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনাল নেমে এসেছিল ২০ ওভারে। প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত ৭ উইকেটে ১২৯ রান সংগ্রহ করেন। এর জবাবে ইংল্যান্ড মাত্র ১২৪ রানেই অল আউট হয়ে যায়। টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচে ভারত ৫ রানে জয়ী হয়।
২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ভারতের শিখর ধাওয়ান। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন শিখর ধাওয়ান (৩৩৮ রান), আর সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েইন পারনেল (১২ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০৯
৮টি দল নিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০৯ অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড মাত্র ২০০/৯ রান সংগ্রহ করে। জবাবে শেন ওয়াটসনের ১০৫ বলে ১২৯ রানের ইনিংসে সহজ জয় তুলে নেয় অজিরা।
২০০৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন রিকি পন্টিং। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২৮৮ রান করেছিলেন পন্টিং। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন ওয়েইন পারনেল (১১ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০৬
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০৬ ভারতে অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ- অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩০ ওভার ৪ বলে মাত্র ১৩৮ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানদের যাত্রা। বৃষ্টির বাধায় অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট দাঁড়ায় ৩৫ ওভারে ১১৬ রান। মাত্র ২৮ ওভার ১ বলে ২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া পৌছে যায় জয়ের বন্দরে।
টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৪৭৪ রান করে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ক্রিস গেইল। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১৩টি উইকেট নিয়েছিলে জেরম টেইলর।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০৪
ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ উঠেছিল ফাইনালে। ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং কড়ে সংগ্রহ করেছিল ২১৭ রান। ৭ বল হাতে রেখে মাত্র ২ উইকেটে এই ম্যাচটি জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০০৪ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন রামনারেশ সারওয়ান। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২৬১ রান করেছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান মার্কাস এডওয়ার্ড ট্রেসকোথিক। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটপ (৯ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০২
২০০২ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, অংশ নিয়েছিল ১২টি দল। ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ২২২ রান। এরপরে বৃষ্টির বাধায় ভারত আর ব্যাটিং করতে পারে নি। এমনকি রিজার্ভ ডেতেও বৃষ্টির কারণে খেলা মাঠে গড়ায় নি। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যৌথভাবে ২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সবচেয়ে বেশি রান করেছিলেন বীরেন্দর শেবাগ (২৭১ রান), সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন (১০ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০০
ভারতকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০০০ জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ১১৭ রানের ইনিংস এ ভর করে ভারত সংগ্রহ করে ২৪৬/৬ রান। জবাবে ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ম্যাচটি জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
২০০০ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সবচেয়ে বেশি রান করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি (৩৪৮ রান), সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন ভেঙ্কাটেস প্রসাদ (৮ উইকেট)।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ১৯৯৮
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ১৯৯৮ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ৯টি দল। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যায়িবিয়রা সংগ্রহ করতে পারে ২৪৫ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয়।
১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিল জ্যাক ক্যালিস। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৮ উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন ক্যালিস। সবচেয়ে বেশি রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিলো ওয়ালেস (২২১ রান)।
আরও পড়ুন- ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন তালিকা (১৯৭৫-২০১৯)
আরও পড়ুন- টি-২০ বিশ্বকাপ কে কতবার নিয়েছে?
আরও পড়ুন- এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন লিস্ট