in ,

আইপিএলে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার, আয়

আইপিএলে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার, আয়
আইপিএলে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার, আয়

সাকিব আল হাসান শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকা নন, তিনি বিশ্ব ক্রিকেটেরই এক মহারথী। আইপিএলে সাকিব আল হাসান ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত অংশ নিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছে এক অন্য উচ্চতায়। আইপিএল সাকিব আল হাসানকে খেলোয়াড় হিসেবে যে আরও সমৃদ্ধ করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আইপিএলে ভালো পার্ফমেন্সের কারণেই সিপিএল, বিগ ব্যাশের মতো টুর্নামেন্টগুলো সুযোগ পেলেই সাকিবকে কোন না কোন দলে জায়গা করে দিয়েছে।

২০২১ আইপিএলে ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে সাকিব আল হাসানকে দলে দিয়েছে তার পুরনো দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট না খেলে ২০২১ আইপিএলে সাকিবের অংশ গ্রহণ নিয়ে জল কম ঘোলা হয় নাই। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের সাথে একরকম যুদ্ধেই জড়াতে হয়েছে। আকরাম খান মিডিয়ার সামনে এসে বলেছিলেন, সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান নিজেই জানিয়েছেন তিনি এমন কিছু বলেন নি। তিনি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে আইপিএল খেলতে চেয়েছেন।

আকরামের কথা এক অর্থে ঠিক হলেও, সাকিব চিঠিতে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা বলে যে ছুটি চেয়েছে, এটি তিনি মিডিয়ার সামনে আর বলেন নাই।

সে যাইহোক, খেলার কথায় ফেরা যাক। আইপিএলে সাকিব হাসানের মোট রান কত, মোট উইকেট কত কিংবা আইপিল থেকে সাকিব আল হাসান কত টাকা আয় করেন, তার মাসিক বেতন কত সেটা নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের কৌতূহলের শেষ নেই। তাই আইপিএলকে ঘিরে সাকিব আল হাসান সম্পর্কিত এমন সব প্রশ্নের উত্তর এই লেখায় খোঁজার চেষ্টা করবো।

আইপিএলে সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসান প্রথম আইপিএল খেলেন ২০১১ সালে। ২০২১ পর্যন্ত মাঝে দু’বার খেলতে পারেন নি। ২০১৩ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দলে থাকলেও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেন নি একটি ম্যাচও। আর ২০২০ আইপিএলে সাকিব খেলতে পারেন নি এক বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকায়।

২০১১ থেকে ২০২০ আইপিএল পর্যন্ত সাকিব মোট আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন ৬৩টি। আইপিএলের এই ৬৩ ম্যাচে ৪৬ ইনিংসে  সাকিবের মোট রান ৭৪৬, গড় ২১.৩১, স্ট্রাইক রেট ১২৬.৬৫, সর্বোচ্চ রান ৬৬*। আর আইপিএলে সাকিবের মোট উইকেট সংখ্যা ৫৯টি, ইকোনমি রেট ৭.৪৬। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এখন পর্যন্ত দুই বার সাকিব আল হাসান আইপিএল শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন, ২০১২ ও ২০১৪ সালে।

আইপিএল ২০১১

২০১১ আইপিলে সাকিব আল হাসানকে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার রুপিতে প্রথম দলে নিয়েছিল শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ২০১১ আইপিএলে সাকিব সুযোগ পেয়েছিলেন ৭টি ম্যাচে। এই ৭ ম্যাচে ৩ ইনিংসে সাকিবের সংগ্রহ ছিল ২৯ রান, গড় ১৪.৫০, স্ট্রাইক রেট ১৩১.৮১। নিজের প্রথম আইপিএল আসরে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ না পেলেও বল হাতে সাকিব নিয়েছিলেন ১১ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.৮৬।

আইপিএল ২০১২

২০১২ আইপিএলে সাকিব আল হাসানের মূল্য ছিল ২ কোটি ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০। ২০১২ আইপিএলে সাকিব আল হাসান সুযোগ পেয়েছিলেন ৮টি ম্যাচ খেলার। এই ৮ ম্যাচে ৭ ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে করেছিলেন ৯১ রান, গড় ১৫.১৬, স্ট্রাইক রেট ১২২.৯৭। বল হাতে ২০১২ আইপিলে সাকিবের সংগ্রহ ছিল ১২ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.৫০। ২০১৪ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

আইপিএল ২০১৩

সাকিব আল হাসান ইনজুরির কারণে ২০১৩ আইপিএল খেলতে পারেন নি। যদিও তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের অংশ ছিলেন এই মৌসুমেও। ২০১৩ আইপিএলে সাকিব আল হাসানের মূল্য ছিল ২ কোটি ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫০।

আইপিএল ২০১৪

২০১৪ আইপিএলে সাকিবের দাম ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ রুপি। ২০১৪ আইপিএলে সাকিব আল হাসান খেলেছিলেন ১৩টি ম্যাচে। এই আসরে ১১ ইনিংসে সাকিব করেছিলেন ২২৭ রান, গড় ৩২.৪২, স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৩৪। ২০১৪ আইপিএলে সাকিবের সংগ্রহে ছিল ১১ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.৬৮।

আইপিএল ২০১৫

২০১৫ আইপিএলে সাকিব খেলেছেন মাত্র ৪টি ম্যাচে। বলে-ব্যাটে সাকিব ছিলেন অনুজ্জ্বল। ২০১৫ আইপিএলেও সাকিবের দাম ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ রুপি। এই আসরে সাকিব ব্যাট তিন ইনিংসে করেছিলেন ৩৬ রান, গড় ১২.০০, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৩৩। বল হাতে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট, ইকোনমি রেট ৮.৭৮।

আইপিএল ২০১৬

২০১৬ আইপিএলে সাকিবের দাম ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ রুপি। ২০১৬ আইপিএলে ১০ ম্যাচে ৭ ইনিংসে ২২.৮০ গড়ে সাকিব করেছিলেন ১১৪ রান, স্ট্রাইক রেট ১০৭.৫৪। বোলিং-এও বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেন নি সাকিব। নিয়েছিলেন মাত্র ৫ উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন ৭.৮৩ করে।

আইপিএল ২০১৭

টানা ৪ মৌসুম একই দামে সাকিবকে কলকাতা ধরে রেখেছিল। ২০১৭ আইপিএলেও সাকিবের দাম ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ রুপি। ২০১৭ আইপিএলে সাকিব খেলেছিলেন মাত্র ১টি ম্যাচে। এই এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ১ রান করে অপরাজিত ছিলেন সাকিব। আর বল হাতে ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে কোন উইকেটের দেখা পাননি।

আইপিএল ২০১৮

২০১৭ আইপিএলের পর সাকিব আল হাসানকে কলকাতা ছেড়ে দেয়। ২০১৮ আইপিএলে ২ কোটি রুপি দামে সাকিবকে কিনে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। ২০১৮ আইপিএলে সাকিব তার আইপিএল ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। এই আসরে সাকিব হায়দ্রাবাদের হয়ে ১৭ ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পান। এই ১৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে সাকিব ব্যাট হাতে করেছিলেন ২৩৯ রান, গড় ২১,৭২, স্ট্রাইক রেট ১২১.৩১। বল হাতে এই ১৭ ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ ছিল ১৪ উইকেট, ইকোনমি রেট ৮.০০।

আইপিএল ২০১৯

২০১৯ আইপিএলে ২ কোটি রুপি দামে সাকিবকে দলে রেখে দেয় হায়দ্রাবাদ। তবে এই মৌসুমে সাকিব নিয়মিত দলে জায়গা পাননি। মাত্র ৩ ম্যাচে ১ ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে সাকিব করেছিলেন ৯ রান। বল হাতে নিয়েছিলেন মাত্র দুই উইকেট, ইকোনমি রেট ছিল ৮.৭৬।

২০১৯ আইপিএলে সাকিব আল হাসান সুযোগ না পেয়ে যেন নিজেকে আরও কঠিন ভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন। হায়দ্রাবাদের হয়ে মাঠে না নামলেও দেশ থেকে নিজের প্রিয় কোচ সালাউদ্দিনকে  উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মাঠের বাইরে করেছিলেন কঠোর অনুশীলন। যার ফল বিশ্ববাসী দেখেছে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে।

আইপিএল ২০২০

২০১৯ সালে সাকিবকে ১ বছরের জন্য সাকিবকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তাই ২০২০ আইপিএলে সাকিব খেলতে পারেন নি।

আইপিএল থেকে সাকিব আল হাসানের আয়

আইপিএলে সাকিব আল হাসান মোট আয় করেছেন ২৪ কোটি ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ রুপি।

সাল দল দাম (রুপি)
২০২১ কলকাতা ৩ কোটি ২০ লাখ
২০১৯ হায়দ্রাবাদ ২ কোটি
২০১৮ হায়দ্রাবাদ ২ কোটি
২০১৭ কলকাতা ২ কোটি ৮০ লাখ
২০১৬ কলকাতা ২ কোটি ৮০ লাখ
২০১৫ কলকাতা ২ কোটি ৮০ লাখ
২০১৪ কলকাতা ২ কোটি ৮০ লাখ
২০১৩ কলকাতা ২ কোটি ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫০
২০১২ কলকাতা ২ কোটি ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০
২০১১ কলকাতা ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার

আইপিএলে সাকিব আল হাসান এর ক্যারিয়ার

আইপিএলে সাকিব আল হাসান ব্যাটিং পরিসংখ্যান

সাল ম্যাচ ইনিংস রান গড় স্ট্রাইক রেট
২০১৯ ৯.০০ ৯০.০০
২০১৮ ১৭ ১৩ ২৩৯ ২১.৭২ ১২১.৩১
২০১৭ ১* ১০০
২০১৬ ১০ ১১৪ ২২.৮০ ১০৭.৫৪
২০১৫ ৩৬ ১২.০০ ১৩৩.৩৩
২০১৪ ১৩ ১১ ২২৭ ৩২.৪২ ১৪৯.৩৪
২০১২ ৯১ ১৫.১৬ ১২২.৯৭
২০১১ ২৯ ১৪.৫০ ১৩১.৮১
মোট ৬৩ ৪৬ ৭৪৬ ২১.৩১ ১২৬.৬৫

আইপিএলে সাকিব আল হাসান বোলিং পরিসংখ্যান

সাল ম্যাচ উইকেট ইকোনমি
২০১৯ ৮.৭৬
২০১৮ ১৭ ১৪ ৮.০০
২০১৭ ১০.৩৩
২০১৬ ১০ ৭.৮৩
২০১৫ ৮.৭৮
২০১৪ ১৩ ১১ ৬.৬৮
২০১২ ১২ ৬.৫০
২০১১ ১১ ৬.৮৬
মোট ৬৩ ৫৯ ৭.৪৬