in

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কি বোঝো?

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কি বোঝো?
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কি বোঝো?

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে বুঝায় অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন। উন্নয়ন হলো সমৃদ্ধি বা সার্বিক মানোন্নয়ন। দেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলা যায়। সম্পদ বলতে দেশের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদকে বোঝায়। উন্নয়ন অর্জনের প্রক্রিয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থনেরও প্রয়োজন হয়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development) ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic Growth) এ দুটিকে অনেক সময় একই অর্থে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ দুটি এক নয়, কিছুটা পার্থক্য আছে।

কোন দেশের জাতীয় আয়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হারকে প্রবৃদ্ধির হার বলা হয়। প্রবৃদ্ধি হার হচ্ছে জাতীয় আয়ের পরিবর্তনের হার। প্রবৃদ্ধির হারের সাথে জনসংখ্যা ও দ্রব্যমূল্যস্তর বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ধারণ করা হয়। এখানে প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়।

কোন দেশের প্রবৃদ্ধির হার যদি ২% হয় এবং সে দেশের জনসংখ্যাও যদি ২% হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে বলা যাবে না। কারণ, প্রবৃদ্ধির হার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একই হলে মাথাপিছু আয় একই থাকবে। যদি প্রবৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হয়, তাহলেই মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে বলা যাবে। তবে এর সাথে দ্রব্য মূল্যস্তর পরিবর্তনের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

ধরা যাক, কোন নির্দিষ্ট বছরে কোন দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ৫% বেড়েছে। একই সময়ে সে দেশের দ্রব্যমূল্যও ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও জনগণ পূর্বাপেক্ষা অধিকতর দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করতে পারবে না। অর্থাৎ তাদের আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেলেও তাদের প্রকৃত আয় বাড়েনি। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে বলা যাবে না। দ্রব্যমূল্য স্থির থেকে যদি মাথাপিছু আয় বাড়ে অথবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার অপেক্ষা কম হয়, তাহলেই প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। প্রকৃত মাথাপিছু আয় দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে তবেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে বলা যাবে।

কোন দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা আয় বৃদ্ধির সাথে দীর্ঘ সময় ধরে মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। এই অব্যাহত প্রকৃত আয় বৃদ্ধি তখনই সম্ভব যখন কোন দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত ও প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে। অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অবকাঠামো এবং উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন।

অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের আওতায় ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণদান কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হয়। দ্রব্য ও সেবার বিপণন ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটে। একই সাথে উৎপাদনে উন্নততর প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহৃত হয়। ফলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়। উৎপাদিত সম্পদ বা জাতীয় আয় বণ্টনে বৈষম্য বা অসমতা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। ফলে উৎপাদনের উপাদানসমূহ বিশেষত শ্রমিক তার ন্যায্য পারিশ্রমিক বা মজুরি লাভ করে। এতে জনগণের সার্বিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায়।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য দেশের সকল জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও আয়ের সুষম বণ্টন এই কল্যাণ নিশ্চিত করে।

এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামাজিক অবকাঠামোরও পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে সুশাসনের সুফল, শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা সকল জনগণের কাছে পৌঁছে যায়। এতে জনগণের জীবনমানে উন্নয়ন ঘটে। জনগণ উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা উপলব্ধি করে।  জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও কমে যায়।

অর্থনীতির প্রকৃতিগত পরিবর্তন বলতে কৃষিপ্রধান অবস্থা থেকে শিল্পপ্রধান অর্থনীতিতে রুপান্তরিত হওয়াকে বোঝায়। এর ফলে দেশ গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শহরভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় রুপান্তরিত হয়। জনগণের আয় বৃদ্ধি পায়।

সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের হার এবং বিনিয়োগও বৃদ্ধি পায়। ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পায়। জীবনযাত্রার মানে ক্রমাগত উন্নতি হতে থাকে। এই সার্বিক উন্নত অবস্থাকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, প্রবৃদ্ধির হারের তুলনায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক বিষয়।

কোন দেশের আর্থ- সামাজিক অবকাঠামোর ক্রমাগত উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রকৃতিগত পরিবর্তনের ফলে সে দেশের জনগণের মাথাপিছু প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হলে তাঁকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে বিশ্বের দেশসমূহকে তিনটি ভাগে বিন্যস্ত করা হয়ঃ উন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ।

আরও পড়ুন- উন্নত দেশ কাকে বলে? উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুন- উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে? উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুন- অনুন্নত দেশ কাকে বলে? অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য