ক্লাস ৬ থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলা পরীক্ষায় অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণটি বারবার আসে। তাই পরীক্ষার্থীদের জন্য আমাদের নিজেদের লেখা “অর্থই অনর্থের মূল” ভাবসম্প্রসারণটি নিচে তুলে ধরা হলো।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ আমাদের জীবন ধারণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে অর্থ। শ্রমিক থেকে শুরু করে বড় কোন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা- সকলের কর্মের প্রধান উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন। কিন্তু পৃথিবীতে সংঘটিত সিংহভাগ অপরাধের মূলে থাকে অর্থ৷ ফ্রান্সিস বেকন বলেছেন- “টাকাপয়সা চমৎকার ভৃত্য কিন্তু বাজে প্রভু।”
সম্প্রসারিত ভাবঃ বর্তমান পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থ। অর্থ ছাড়া জীবন ধারণ করা একেবারেই অসম্ভব। প্রাচীনকালে যখন মানুষ ধীরে ধীরে সভ্য হতে শুরু করলো তখন তারা একে অন্যের সাথে পণ্য বিনিময় করে তাদের প্রয়োজন মেটাতো৷ তারপর সময়ের সাথে বিনিময় প্রথা বিলুপ্ত হয়ে আবির্ভাব হলো অর্থের৷
বর্তমান সমাজের সব কিছুই অর্থ নির্ভর। আর এই অর্থ নির্ভরতা গ্রাস করে নিয়েছে বহু মানুষের মনুষ্যত্বকে। এমন কিছু মানুষ আছে যাদের প্রচুর অর্থ থাকা সত্ত্বেও মনের আশ মেটেনা। তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন করা। অর্থের নেশায় মত্ত হয়ে তারা যেকোন রকমের অপরাধ করতেও প্রস্তুত থাকে। বর্তমানে অর্থের জন্য সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ ভয়ংকর অপরাধ, সৃষ্টি হচ্ছে সংঘাত, ঘৃণার। অর্থের জন্য রক্তের সম্পর্ক ছিন্না করাতেও আজকাল অনেকে পিছপা হয়না। অনেক হতভাগ্য পিতা-মাতা সন্তানের হাতে লাঞ্চিত হয় শুধুমাত্র অর্থের কারণে। আবার অনেক সন্তানকে অনাথ হতে হয় অর্থের কারণে।
বর্তমানে শিক্ষা, চিকিৎসা সবকিছুই অর্থ নির্ভর। এমনকি জন্মের পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারলে নবজাতককেও মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে অন্যত্র বিক্রির ঘটনা নতুন কিছু নয়। মৃত্যুর পরে অনেকের লাশ ভাগাড়ে ছুঁড়ে ফেলা হয় শুধুমাত্র অর্থ না থাকার কারণে। কারণ মানুষ তার বিবেকবোধ অর্থের কাছে বহু আগেই বিক্রি করে দিয়েছে। নেশার টাকা যোগাড় করতে সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটে চলেছে৷ আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা মনে করে অর্থই জীবনের সর্বস্ব। অর্থের প্রভাবে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পিছপা হয়না। দরিদ্র মানুষদের সাথে তাদের আচরণ হয় পশুর মতো। তারা এটা ভুলে যায় যে মানুষের জন্য অর্থ, অর্থের জন্য মানুষ নয়। তাদের বোধগম্য হয়না যে নিজের কোটি টাকা থেকে যদি সামান্য কিছু অর্থ কোন অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করা হয় তবে তা সৃষ্টিকর্তা দ্বিগুণ করে আমাদের ফেরত দেন৷
কোন রাষ্ট্রের অপরাধ বা দুর্নীতির জন্য দায়ী এই অর্থ৷ মানুষের যত পাই তত চাই স্বভাব তাদের লোভকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অর্থই অনর্থের মূল এটা অনেক মানুষই মনে রাখেন না। মানুষের নৈতিক অধঃপতনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী অর্থ। রোজ পত্রিকা জুড়ে হাজারো অপরাধের খবর ছাপানো হয়। কেউ চুরি, করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, কেউ বা ডাকাতি। কেউ আবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে হারাচ্ছে তার সর্বস্ব, কাউকে হারাতে হচ্ছে প্রাণ। এই সমস্ত অপরাধের মূল কারণ অর্থ। যার প্রচুর অর্থ আছে সে চাচ্ছে আরো অর্থের মালিক হতে। এমনকি অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করতেও তার হাত বিন্দুমাত্র কেঁপে উঠেনা৷ আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রায় সময় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আন্দোলনে মাঠে নামতে হয়, পুলিশের গুলিতে হারাতে হয় প্রাণ। অন্যদিকে তাদের প্রভুরা তাদের ন্যায্য পাওনা না মিটিয়ে অবকাশে পাড়ি জমায় বিলেতে। কারণ, তাদের নীতিবোধ, সততাকে তারা বহু আগেই অর্থ আর লোভের কাছে বিসর্জন দিয়েছে। কিন্ত, তারা এটা ভুলে যায় কাউকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা মানে নিজের পাপের কলসে আরেকটু খানি পাপ জমা করা। অর্থের প্রভাবে অনেক প্রভাবশালীরা বড় বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়, অনেকে আবার অর্থের জোরে আইনের রক্ষকদেরও নিজেদের হাতের মুটোয় বন্দী করে নেয়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার দরবারে অর্থ দিয়ে কোন পাপ গুপ্ত রাখা যায় না৷ আমরা যেমন কর্ম করবো সৃষ্টিকর্তা আমাদের ঠিক তেমন ফল ফেরত দেবেন। বর্তমানে আমাদের চারপাশের অবস্থা বিবেচনা করে বলাই যায় অর্থই অনর্থের মূল।
মন্তব্যঃ অবশ্যই অর্থ আমাদের জীবনধারণের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু তাই বলে কখনো মানুষের শুধুমাত্র অর্থের লোভে নিজের মনুষ্যত্ববোধ বিবেক বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। রবার্ট র. স্চূলল বলেছেন-
“আমাদের সবচেয়ে বড় অভাব কোনও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য টাকা নয়, বরং ধারণাগুলি, যদি ধারণাগুলি ভাল হয় তবে নগদ কোনওভাবে যেখানে এটি প্রয়োজন সেখানে প্রবাহিত হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ সকল ভাবসম্প্রসারণ-
১। ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
৩। ভাবসম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই / মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়
৪। ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
৫। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
৬। ভাবসম্প্রসারণঃ দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
৭। পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন
৮। ভাবসম্প্রসারণ: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই
৯। ভাবসম্প্রসারণঃ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
১০। ভাবসম্প্রসারনঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে..