in

অনুন্নত দেশ কাকে বলে? অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য

অনুন্নত দেশ কাকে বলে? অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য
অনুন্নত দেশ কাকে বলে? অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য

অনুন্নত দেশ বলতে কি বোঝায় ও অনুন্নত দেশ হওয়ার শর্ত/ বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।

অনুন্নত দেশ

প্রধানত মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের নিরিখে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেসব দেশের জনগণের প্রকৃত আয় উন্নত দেশ,যথা- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহের জনগণের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় অনেক কম, সেসব দেশকে অনুন্নত দেশ বলা হয়। তবে শুধু মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের ভিত্তিতে একটি দেশকে অনুন্নত বলা ঠিক নয়। অনুন্নত দেশ বলতে সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে সক্ষম নয়, এমন দেশকেও বোঝায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, যেসব দেশে প্রচুর জনসংখ্যা এবং অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদের সহাবস্থান, সেসব দেশ অনুন্নত দেশ। অধ্যাপক র‍্যাগনার নার্কস বলেন, “অনুন্নত দেশ হচ্ছে সেসব দেশ যেগুলোতে জনসংখ্যা অত্যাধিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় পুঁজি বা মূলধন কম।” এসব দেশে প্রাথমিক পেশার প্রাধান্য, পুঁজির স্বল্পতা ও ব্যাপক বেকারত্ব বিদ্যমান।

অনুন্নত দেশের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। নিম্ন মাথাপিছু আয় এবং জীবনযাত্রার নিম্নমানঃ অনুন্নত দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ হলো উন্নত দেশের তুলনায় জনগণের অত্যন্ত কম মাথাপিছু আয় এবং জীবনযাত্রার নিম্নমান। জনগণের বৃহত্তর অংশেরই মৌলিক চাহিদাসমূহ, যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি পূরণ করার সামর্থ্য থাকে না।

প্রধান প্রধান উন্নত দেশসমূহে যেখানে মাথাপিছু আয় ৩৮,৪২৮ থেকে ৭৫,৫০৪ মার্কিন ডলারের মধ্যে, সেখানে অনুন্নত দেশেসমূহের মধ্যে ২০০ ডলারের কম মাথাপিছু আয়ের দেশও রয়েছে।

২। কৃষির ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতাঃ অনুন্নত দেশের জনগণের বৃহদাংশ খাদ্য, জীবিকা ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি জাতীয় উৎপাদনের একক বৃহত্তম খাত।

৩। অনুন্নত কৃষি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাঃ অনুন্নত দেশে অধিকাংশ জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে এসবদেশে কৃষি উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা অনুন্নত। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ, ত্রুটিপূর্ণ মালিকানা, স্বল্প বিনিয়োগ, কৃষি উপকরণ ও কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও উপাদান, যথা- সার, বীজ, সেচ ও বিপণন সুবিধার অভাব, কৃষির প্রকৃতি নির্ভরতা প্রভৃতি কারণে কৃষি অত্যন্ত অনুন্নত।

৪। ক্ষুদ্র ও অনুন্নত শিল্প খাতঃ পুঁজি এবং দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণে অনুন্নত দেশে শিল্প খাত অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও সীমিত। এসব দেশে মৌলিক বা ভারী শিল্প নেই। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পেরই প্রাধান্য দেখা যায়। সাধারণত মোট জাতীয় উৎপাদনে শিল্প খাতের অবদান শতকরা মাত্র ৮ থেকে ১০ ভাগ।

৫। মূলধন গঠন ও বিনিয়োগের নিম্নহার এবং ব্যাপক বেকারত্বঃ অনুন্নত দেশে মাথাপিছু আয় কম বলে জনগণের আয়ের সবটাই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ভোগের জন্য ব্যয় করতে হয়। এ কারণে জনগণের সঞ্চয়ের হার অত্যন্ত কম। ফলে মূলধন বা পুঁজি স্বল্পতা দেখা দেয় এবং বিনিয়োগের হার নিম্নমুখী হয়। বিনিয়োগ খুব কম বলে নতুন উৎপাদন বা শিল্প স্থাপনের গতি খুব মন্থর। ফলে নতুন কর্মসংস্থান হয় না। বেকারত্ব বেড়ে যায়। মাথাপিছু আয় কম হতে থাকে। এইভাবে দারিদ্র্যের চক্রে দেশটি আবর্তিত হয়।

৬। প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির অসম্পূর্ণ ব্যবহারঃ প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন মূলধন বা পুঁজি এবং দক্ষ জনশক্তি। অনুন্নত দেশে পুঁজি এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তির এতই অভাব যে, দীর্ঘকাল ধরেও দেশে কী কী খনিজ সম্পদ কী পরিমাণে আছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। ফলে সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এসব দেশ দরিদ্র থেকে যায়।

৭। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার এবং অদক্ষ জনশক্তিঃ অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে অনুন্নত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ। দেশের পরিপোষণ ক্ষমতার চেয়ে জনসংখ্যার আয়তন বড়। এই জনসংখ্যাকে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য সুবিধা সরবরাহের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার ব্যবস্থাও নগণ্য।

৮। দুর্বল আর্থ- সামাজিক অবকাঠামোঃ অনুন্নত দেশের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় প্রকার অবকাঠামোর দুর্বলতা। কৃষি ও শিল্পে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অপর্যাপ্ত। এগুলোর ব্যবস্থাপনা দুর্বল। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনুন্নত ও অপর্যাপ্ত। জনগণের বৃহত্তর অংশই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ অত্যন্ত অপ্রতুল।

৯। প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্যঃ অনুন্নত দেশগুলো জনগণের মৌলিক চাহিদা এমনকি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার চাহিদা পূরণের জন্যও আমদানিনির্ভর। এসব দেশ প্রধানত কৃষিপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল রপ্তানি করে এবং শিল্পপণ্য আমদানি করে। রপ্তানি আয় সবসময়ই আমদানি ব্যয়ের চেয়ে কম। ফলে এসব দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যে সবসময়ই ঘাটতি থাকে।

১০। বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতাঃ পুঁজির স্বল্পতার কারণে অনুন্নত দেশসমূহ বিনিয়োগের লক্ষ্যে পুঁজি সংগ্রহের জন্য বিদেশী সাহায্যের ওপর অত্যাধিক নির্ভরশীল থাকে। শুধু পুঁজির যোগান দেওয়ার জন্যই নয়, দুর্যোগ ও আপৎকালীন সময়েও প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য এসব দেশে অতিমাত্রায় বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।

১১। উদ্যোগ ও ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতার অভাবঃ অনুন্নত দেশগুলোতে জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো জনশক্তির অভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থনৈতিক কার্যাবলির অগ্রগতি যেমন পুঁজির ওপর নির্ভরশীল, তেমনি দক্ষ উদ্যোক্তাও এর জন্য অপরিহার্য। এছাড়া দুর্বল অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পুঁজিপতিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। গতানুগতিক ধারায় বিনিয়োগ শুরু হয়। নতুন উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ ও ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে। ফলে অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার হয় না এবং অন্নুন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদি হয়।

আরও পড়ুন- উন্নত দেশ কাকে বলে? উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য

আরও পড়ুন- উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে? উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য